দুই দেশের মধ্যকার চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষের পর ঘোষিত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। সীমান্তবর্তী কাশ্মীর অঞ্চলে নতুন করে গোলাগুলির ঘটনা এই উদ্বেগকে ঘনীভূত করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির পর রোববার সকালেই ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এক বিবৃতিতে বলেন, “যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই সীমান্তের একাধিক স্থানে গোলাগুলি চালানো হয়েছে, যা সদ্য অর্জিত সমঝোতার সরাসরি লঙ্ঘন।” তিনি আরও জানান, “ভারতীয় সেনাবাহিনী এসব উসকানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় জবাব দিচ্ছে।”
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল এবং তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সীমান্তের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভারতীয় বাহিনী থেকে প্রথমে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। আমাদের বাহিনী দায়িত্বশীল আচরণ করছে এবং উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে একটি বিবৃতিতে দুই দেশের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা স্বাগত জানান। এর আগেই ৩০টির বেশি দেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “উভয় পক্ষ একটি সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যার মাধ্যমে সীমান্তে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা স্থগিত থাকবে।”
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত ভাগের পর থেকেই কাশ্মীর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত। দুই দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুতে। সর্বশেষ সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিরতির এই নতুন চক্র সেই পুরোনো আশঙ্কারই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, “যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এক ধাপ অগ্রগতি হলেও উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং অতীতের সংঘাতময় ইতিহাসকে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। যতক্ষণ না রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং গঠনমূলক সংলাপ শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ এই ধরনের সাময়িক শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”